১৬ আগস্ট উদ্বোধন হচ্ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি পাইপলাইন

Admin User ১০ অগাস্ট ২০২৫
১৬ আগস্ট উদ্বোধন হচ্ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি পাইপলাইন

দেশের জ্বালানি পরিবহন ও বিতরণ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি পাইপলাইন। আগামী ১৬ আগস্ট জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, পাইপলাইনের মাধ্যমে একাধিক সফল পরীক্ষামূলক ডিজেল পরিবহন সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হক জানান, 'চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ডিজেল সরবরাহের ট্রায়াল সফলভাবে শেষ হয়েছে। পাইপলাইন এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।'

গত জুনের শেষ দিকে পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জে ৩২ হাজার টন পরিশোধিত ডিজেল মাত্র তিন দিনে সরবরাহ করা হয়। প্রকল্প শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ কোটি লিটার তেল পরিবহন করেছে পাইপলাইনটি।

প্রযুক্তি ও রুট

মোট ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের মূল অংশ ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের এবং দৈর্ঘ্য ২৪১.২৮ কিলোমিটার, যা পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত রয়েছে ৮.২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ১০ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ পাইপলাইন।

পথিমধ্যে এটি ২২টি নদী ও খাল অতিক্রম করেছে, যার মধ্যে ১০টি বড় নদীও রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে, যাতে দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

বিপিসির হিসাব অনুযায়ী, পাইপলাইন চালু হলে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে। ইতিমধ্যে পতেঙ্গায় অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ট্যাঙ্ক থেকে সরাসরি ডিজেল পাম্প করে গোদনাইলে পাঠানো হচ্ছে।

পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন

২০১৫ সালে পরিবহন খরচ কমানো ও চুরি প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রকল্পটির পরিকল্পনা করা হয়। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড ছিল এ প্রকল্পের পরামর্শক। ২০১৮ সালের অক্টোবরে একনেক অনুমোদন দেয়, প্রাথমিক বাজেট ধরা হয় ২,৮৬১ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৬০০ কোটি টাকায় এবং মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত করা হয়।

বর্তমানে প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। পতেঙ্গা থেকে গোদনাইল পর্যন্ত পাইপলাইন পাঁচ ফুট মাটির নিচে বসানো হয়েছে।

ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ

আগামীতে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৮ ইঞ্চি ব্যাসের ৫৯.২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা চাঁদপুর অঞ্চলে জ্বালানি বিতরণ আরও সহজ করবে।

পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হলে চট্টগ্রাম-ঢাকা জ্বালানি পাইপলাইন জ্বালানি সরবরাহের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে, সড়কপথে যানজট হ্রাস করবে, পরিবহন ব্যয় বাঁচাবে এবং ট্যাংকার দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।